মাঙ্গার উৎপত্তি | কিভাবে সর্ব প্রথম মাঙ্গা প্রকাশ শুরু হয়েছিল? - Peak Fiction
Peak Fiction
অনেক পুরানো সংস্কৃতিতে, গল্প বলার জন্য কিছু লিখা বিবরণ সহ ছবির উদাহরণ রয়েছে। উদাহণস্বরূপ, পশ্চিমাদের প্রাচীনতম উদাহরণ হতে পারে ট্যাপেস্ট্রি।যাইহোক, যা জাপানকে অনন্য করে তুলেছে তা হল, সাধারণ মানুষের উচ্চ সাহিত্যের হার এবং এর কাঠে মুদ্রণ করা চিত্র বা বই। নিচে কুসাজোশি নামক বিনোদনের ছবির বইয়ের উদাহরণ দেওয়া হলো যেগুলো এডো আমলে(Edo Period) ছাপা হয়েছিল।
কুসাজোশি |
যাইহোক, জাপানে "কমিক" এর উৎপত্তি আসলে পশ্চিমাদের থেকেই।বিশেষ করে জাপানে বসবাসকারী ইংরেজ কার্টুনিস্ট দ্বারা প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিন যাকে বলা হয় জাপান পাঞ্চ, যা আবার লন্ডনে থাকা পাঞ্চ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। জাপান পাঞ্চ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ইয়োকোহামা তে 1862 সালে এবং জাপানে বসবাসকারী পশ্চিমাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এই কমিক্স গুলো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছিল।
The Japan Punch |
মাঙ্গার সবচেয়ে কাছের ধারার পূর্বপুরুষ হল নিচের কামি-শিবাই যার অর্থ "কাগজের থিয়েটার"। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে শিশুদের জন্য একটি রাস্তার বিনোদন ছিল।
কাগজের থিয়েটার |
বুঝতে হবে যে, সেই সময়ে বাচ্চাদের কাছে বই বা ম্যাগাজিন বা কমিক কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকা ছিল না, তবে অনেক শহুরে বাচ্চাদের মিষ্টি কেনার জন্য কিছু মুদ্রা ছিল।সুতরাং, রাস্তার বিক্রেতারা মিষ্টি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করত এবং তারপরে কিছুক্ষণের জন্য শিশুদের বিনোদন দিত এইসব কাগজের থিয়েটারে। তারপরে পাশের পাড়ায় চলে যেত। শীঘ্রই, তারা দেখতে পেল যে যদি তারা কাগজের থিয়েটার এ একটি এপিসোডিক গল্প বলে তবে তারা এই শিশুদের পুনরাবৃত্তি গ্রাহক হিসাবে তৈরি করতে পারে।
Ogon Bat |
কিন্তু, এটি শীঘ্রই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বাচ্চারা পুরানো ক্লাসিক গল্পগুলি বেশি উপভোগ করে না। তারা আসলে আধুনিক সেটিং এর গল্প যেমন শিশু গোয়েন্দা, রহস্যময় দানব এবং অবশেষে ১৯৩০-এর দশকে সুপারহিরো এর গল্পগুলো বেশি পছন্দ করে। উপরের Ogon Bat ১৯৩১ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এটা সম্ভবত বিশ্বের প্রথম সুপারহিরো বা অ্যান্টি-হিরো এর গল্প কারণ তাঁর মূল গল্পটি হল আটলান্টিয়ান ডেমি-মানুষ যার সুপার শক্তি এবং উড়ার ক্ষমতা নিয়ে ভ্রমণ করার সময় তিনি ডাঃ এরিক নাজোর সাথে লড়াই করেন যে একটি ক্রাইম সিন্ডিকেট এর লিডার এবং বিশ্ব আধিপত্যের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
লাল বই |
এছাড়াও প্রায় ১৯৩০-এর দশকে, শিশুদের জন্য মাঙ্গা প্রকাশনা বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হতে শুরু করে। এই ম্যাগাজিনগুলোকে আকা-হন (লাল বই) বলা হত কারণ এদের সামনের বইয়ের কভার ছিল লাল।এই সময়তেই এই পনচি ছবিগুলো ওরফে কমিককে মান-গা বলা শুরু হয় যার অর্থ হলো প্রবাহিত ছবি কারণ এই ম্যাগাজিন গুলো ধারাবাহিক ছবির মাধ্যমে গল্প বলা শুরু করে।
শিন-টাকারাজিমা |
এবং তারপর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে, ১৯৪৭ সালে, তেজুকা ওসাম এবং সাকাই শিচিমা মিলে শিন-টাকারাজিমা (নতুন ট্রেজারি আইল্যান্ড) নামে একটি কমিক বুক প্রকাশ করেন। যদিও বেশিরভাগ রেড-বুক কমিক শিশুদের ম্যাগাজিনের অংশ হিসাবে ৪ পৃষ্ঠার মতো ছিল কিন্তু শিন-টাকারাজিমা ২০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এবং ম্যাগাজিনের অংশের পরিবর্তে একটি স্বাধীন বই হিসাবে বিক্রি হয়েছিল।শিন তাকারাজিমা-তে, তারা জেনার-ব্রেকিং নতুন কৌশল ব্যবহার করে, যেখানে গল্পটিতে কোনো লিখা ছিল না শুধু ছবির ক্রম দ্বারা গল্প চালিত হয়েছিল।
নীচে মাঙ্গা এর একটি পেজের ছবি দেওয়া হলো যেখানে গল্প বর্ণনা করার জন্য কোন টেক্সট ব্যবহার করা হয় নি -
শিন-টাকারাজিমা |
শিন টাকারাজিমায় কে কী করেছে তা নিয়ে একটি অমীমাংসিত বিতর্ক রয়েছে। সাকাইকে কৃতিত্ব দেওয়া হয় যে তিনি গল্পটি লিখেছেন এবং সামগ্রিক সম্পাদনা করেছেন।অন্যদিকে, তেজুকাকে চিত্রকর হিসাবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে।কিন্তু মজার বিষয় হল তখন তেজুকা একজন আপস্টার্ট কমিক লেখক ছিলেন এবং সাকাই কেবল কমিকের একজন অভিজ্ঞ সম্পাদকই ছিলেন না তিনি আসলে একজন অ্যানিমেটরও ছিলেন।
যাইহোক, সাকাই লাল বইয়ের একজন কমিক লেখক হিসাবে ওসাকায় থেকে যায় আর তেজুকা, শিন তাকারাজিমার সাফল্যের পরে, ওসাকা থেকে টোকিওতে চলে যায় এবং তার মাঙা লিখার কৌশল বিকাশ করতে শুরু করে এবং একটি নতুন ধারা তৈরি করে যা স্টোরি মাঙ্গা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর পর জাপানে মাঙ্গা প্রভাবশালী রূপ হয়ে ওঠে এবং স্টোরি মাঙ্গাকে কেবল মাঙ্গা বলা শুরু হয়।
এভাবেই মাঙ্গা এর উৎপত্তি হয়।
Comments
Post a Comment