জাপানের চির বাঙালি বন্ধু রাধা বিনোদ পাল - Peak Fiction
জাপান বাংলাদেশকে এতো সহায়তা করার পেছনে রয়েছে এক বাঙালি বিচারপতির ক্যারিশমা; যার নাম রাধা বিনোদ পাল।বাংলাদেশের একেবারে নিঃস্বার্থ বন্ধু দেশ কোনটি? নিঃসন্দেহে জাপান। কখনো প্রশ্ন জেগেছে কেন জাপান বাংলাদেশকে এতো সহায়তা করে?
তাহলে আসুন জেনে নিই...
ফিরে যাওয়া যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জাপানে। জাপানিদের চাওয়া ছিল পশ্চিমাদের মত এশিয়াতে তারাও কলোনিয়াল ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এ নেশায় তারা বিভিন্ন দেশে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে নিজেদের দখলে নিতে শুরু করে। আর এখনকার জাপান যতোটা সভ্য, শান্তশিষ্ট তখনকার জাপান ছিলো এর ঠিক বিপরীত মেরুতে। ফলস্রুতিতে দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য তারা তাদের চূড়ান্ত হিংস্র রূপ দেখিয়েছিলো।
১৯৩৭ সাল। বর্তমান চীনের নানজিং এ জাপানিরা চাইনিজদের একপ্রকার কচুকাটা করেছিলো। খুন, ধর্ষণ থেকে শুরু করে বেয়নেট দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করার এমন নজির খুব কমই দেখেছে বিশ্ব। এ হত্যাযজ্ঞ থামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রতিপক্ষ কর্তৃক তাদের জব্দ হওয়ার পর।
এরপর জাপানিরাও বুঝতে পারে যে নেশায় তারা এসব করছে তার আগুন তাদের নিজেদেরকেও পুড়িয়ে দিচ্ছে। এ রক্তপাত বন্ধ করে তারা সভ্য জাতি হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের ফেলে আসা কীর্তিগুলো। জাপানিদের দ্বারা হওয়া সকল বর্বরতার বিচারের জন্য গঠিত হয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর 'টোকিয়া ট্রায়াল'...
১১ টি দেশের ১১ জন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয় টোকিও ট্রায়াল। যেখানের একজন ছিলেন বাঙ্গালি বংশোদ্ভূত। কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া এই বাঙালি বিচারপতির নাম রাধা বিনোধ পাল। তারই প্রজ্ঞা আর দৃঢ় কৌশলগত কারণে জাপানিরা বেঁচে যায় অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে। জাপানিরা যা করেছিলো, তার পেছনে অল্প কয়েকজন মানুষের হাত থাকলেও মিত্র শক্তি চেয়েছিলো পুরো জাতিকেই এর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিতে যেটি রাধা বিনোধ পালের কারণে সম্ভব হয়নি।
আর তাই জাপানি সম্রাট হিরোহিতো কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেছিলেন,
যতদিন জাপান থাকবে, বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবেনা। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নিঃশর্ত বন্ধু।
আর কুষ্টিয়ায় জন্ম নেয়া সেই বাঙালি বিচারকের নাম এখনো জাপানী পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তাঁর নামে জাপানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কিছু মেমোরিয়াল ও মনুমেন্ট। এই বিস্মৃত বাঙালির নাম বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল (১৮৮৬-১৯৬৭)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক ছাড়াও জীবদ্দশায় অনেক বড় বড় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে তিনি কুষ্টিয়ায় নিজ গ্রামের স্কুল ও রাজশাহী কলেজের ছাত্র ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে প্রভাষক ছিলেন। কিছুদিন ময়মনসিংহ কোর্টে আইন ব্যবসাও করেছিলেন।জাপান এই ট্রায়ালের উপর একটা মিনি সিরিজ তৈরি করে ২০১৬ সালে। যেখানে রাজা বিনোদ পালের ভূমিকায় ছিলেন ইরফান খান।
বলা যায়, এই জাপানি মিনি টিভি সিরিজটি এমন এক সত্যিকার ইভেন্টের উপর নির্মিত যেটি পালটে দিয়েছিলো পুরো জাপানের ভবিষ্যত...বলা যায় পুরো পৃথিবীর ভবিষ্যত...!
সংগ্রহীত
Comments
Post a Comment