ঘসেটি বেগম কে ছিলেন? ঘসেটি বেগমের জীবনী।

ঘসেটি বেগম কে ছিলেন? ঘসেটি বেগম এর ছবি ও ঘসেটি বেগম সিরাজের কে ছিলেন? সিরাজের বিরুদ্ধে ঘসেটি বেগমের আক্রোশের কারণ। Peak Fiction

ঘসেটি বেগম: বাংলার ইতিহাসে এক অসাধারণ নারী

ঘসেটি বেগম কে ছিলেন? ঘসেটি বেগমের জীবনী।
ঘসেটি বেগম, যার আসল নাম ছিল মেহেরুন্নেসা, ছিলেন ১৮ শতকের বাংলার একজন ক্ষমতাবান নারী। তিনি নবাব আলীবর্দী খানের জ্যেষ্ঠা কন্যা এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালা ছিলেন। ষড়যন্ত্র, রাজনীতি এবং ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িত থাকার জন্য তিনি বাংলার ইতিহাসে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। ঢাকার নায়েব নাজিম নওয়াজিস মুহম্মদ শাহমাত জংয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁরা নিঃসন্তান হওয়ায় ঘসেটি বেগমের ছোট বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে ইকরামউদ্দৌলা (সিরাজউদ্দৌলার ছোট ভাই)-কে দত্তক নেন; কিন্তু ইকরামউদ্দৌলা তরুণ বয়সে গুটিবসন্তে মারা যান। ছেলের শোকে নওয়াজিস মারা গেলে ঘসেটি বেগম উত্তরাধিকার সূত্রে স্বামীর কাছ থেকে প্রচুর সম্পদ পান।

প্রাথমিক জীবন:

ঘসেটি বেগম কে ছিলেন? ঘসেটি বেগমের জীবনী। Peak Fiction
ঘসেটি বেগম এর ছবি 
ঘসেটি বেগম ১৭২৫ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিমান এবং সাহসী নারী। নবাব আলীবর্দী খান তাঁর মেয়েদের শিক্ষার উপর জোর দেন এবং ঘসেটি বেগম ফার্সি, আরবি এবং বাংলা ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করেন এবং রাজনৈতিক বিষয়ে তার পিতার সাথে পরামর্শ করতেন।

সিরাজউদ্দৌলার সাথে সম্পর্ক:

নবাব আলীবর্দী খান তার মৃত্যুর পূর্বে তার নাতি সিরাজউদ্দৌলাকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। এই সিদ্ধান্তে ঘসেটি বেগম অসন্তুষ্ট ছিলেন কারণ তিনি তার নিজের পুত্র শওকত জংকে সিংহাসনে দেখতে চেয়েছিলেন। 

ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহ:

সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে আরোহণের পর, ঘসেটি বেগম তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তিনি মীরজাফর যে কিনা ষড়যন্ত্রকারী সেনাপতির ছিল তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং সিরাজকে হত্যা করে তার পুত্র শওকত জংকে সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনা করেন।

পলাশীর যুদ্ধ:

১৭৫৭ সালে, ঘসেটি বেগমের ষড়যন্ত্র সফল হয় এবং পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এই যুদ্ধে সিরাজ পরাজিত হন এবং মীরজাফর নবাব হন। 
ঘসেটি বেগম এর ছবি
ঘসেটি বেগম

মৃত্যু:

ঘসেটি বেগম ১৭৬০ সালে মারা যান। তিনি একজন জটিল এবং বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর মীর জাফর, ঘসেটি বেগমেকে ঢাকার জিনজিরা প্রাসেদে অন্তরীণ করেন। কিন্তু ঘসেটিকে বিপদজনক শত্রু মনে করে, মীর জাফর এর পুত্র মীরন তাকে ১৭৬০ সালে মুর্শিদাবাদ ফেরত নিয়ে আসার আদেশ দেন। কথিত আছে, মুর্শিদাবাদ ফেরার পথে বুড়িগঙ্গা নদীতে তার সলিল সমাধি ঘটে।

ঘসেটি বেগমের ঐতিহাসিক মূল্যায়ন

ঘসেটি বেগমের ঐতিহাসিক মূল্যায়ন বেশ বিতর্কিত। কিছু ইতিহাসবিদ তাকে একজন ক্ষমতাহীনুর নারী হিসেবে দেখেন, যিনি স্বার্থের খাতিরে সাজিশ ও ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তার ষড়যন্ত্রের ফলেই পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে এবং বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়।

অন্যদিকে, অন্যান্য ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, ঘসেটি বেগম কেবল ক্ষমতার খেলায় অংশগ্রহণকারী নারীই না, বরং তিনি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি সেই সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করেছিলেন।


ঘসেটি বেগম সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর:

ঘসেটি বেগমের পালক পুত্রের নাম কি?

ঘসেটি বেগম শওকত জংকে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। 

ঘসেটি বেগম সিরাজের কে ছিলেন?

ঘসেটি বেগম ছিলেন সিরাজউদ্দৌলার খালা ছিলেন।

ঘসেটি বেগমের স্বামীর নাম কি?

ঢাকার নায়েব নাজিম নওয়াজিস মুহম্মদ শাহমাত জংয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

ঘসেটি বেগম কোন প্রাসাদে থাকতেন?

ঘসেটি বেগম ঢাকার মতিঝিল এলাকায় অবস্থিত আটচালা প্রাসাদে বসবাস করতেন। 

About the author

Noman Chowdhury
I am an avid reader, particularly drawn to books and technology. My diverse interests and drive for exploration make me a well-rounded individual with a thirst for adventure. instagramfacebookyoutubepinterest

Post a Comment