গ্রীক পুরাণ প্রেমের গল্প। Epic Greek love story - Trojan War - ট্রোজান যুদ্ধ / Peak Fiction

গ্রীক পুরাণ প্রেমের গল্প। Epic Greek love story - Trojan War - ট্রোজান যুদ্ধ / Peak Fiction হেলেন এর প্রেম কাহিনী সীতার অগ্নি পরীক্ষা Peak Fiction
Curse of Beauty Helen
Cursed Beauty Helen

গ্রীক পুরাণের ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হল, গ্রীকলেখক কালজয়ী হোমারের জগতবিখ্যাত এপিক “ ইলিয়াড।” নাম করা সেই যুদ্ধের নাম হল, “Trojan War!” যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর- ট্রয়! ইতিহাসে যা “Helen of troy” নামে বিখ্যাত। দেবরাজ জিউস এবং স্পার্টার রাজা টিন্ডারিউসের পত্নী লীডার মিলনের ফলে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হেলেনের জন্ম হয়।অন্য কাহিনিতে রয়েছে দেবরাজ জিউস বনহংসের রূপ ধরে লিডার সঙ্গে মিলিত হলে লিডা দুটি ডিম প্রসব করেন। একটি ডিম ফুটে হেলেন ও ক্লাইটেমেনেস্ট্রা ও অন্য ডিম ফুটে ক্যাস্টর ও পলিডিউসিসের জন্ম হয়।

 Leda and the Swan

আবার অন্য কাহিনিতে রয়েছে জিউস নেমেসিসের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য তাকে ধাওয়া করেন। নেমেসিস বুনো হাঁসের রূপ ধরে যখন পালাচ্ছিলেন তখন জিউসও বুনোহাঁসের রূপে তার সঙ্গে মিলিত হন। নেমেসিস একটি ডিম প্রসব করে তা জলাশয়ের কিনারে ফেলে দেন। এদিকে রানি লিডা তখন সেই জলাশয়ের কিনারে পা ছড়িয়ে বসে ছিলেন। সে সময় হার্মিস ডিমটি লিডার কোলে ফেলে দেন। লিডা ডিমটি প্রাসাদে নিয়ে গিয়ে সিন্দুকে লুকিয়ে রাখেন। ডিম ফুটে হেলেনের জন্ম হয়।

জন্ম যেভাবেই হোক হেলেন ছিলেন অসামান্য সুন্দরী। কৈশোরে গ্রিক বীর থিসিউস তাকে অপহরণ করেন। কিন্তু ক্যাস্টর ও পলিডিউসিস নামে তার দুই যমজ ভাই তাকে উদ্ধার করেন। 

Helen
হেলেন

হেলেনের যখন বিয়ের বয়স হল তখন গ্রিসের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজা ও রাজকুমাররা তার পাণিপ্রার্থী হলেন। এত পাণিপ্রার্থী দেখে রাজা টিন্ডারিউস ভয় পেয়ে যান। কারণ প্রত্যাখ্যাতরা যুদ্ধ বাঁধাতে পারে বলে তার আশংকা হয়। তখন ইথাকার রাজা অডিসিউসের প্রচেষ্টায় পাণি প্রার্থীদের মধ্যে একটি চুক্তি হয় যে, হেলেন যাকেই পছন্দ করুক তারা বিনা প্রতিবাদে তা মেনে নেবেন এবং কেউ হেলেনকে অপহরণ করলে সম্মিলিত ভাবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। হেলেন মাইসিনির রাজপুত্র মেনেলাউসকে পছন্দ করেন। মেনেলোউস হেলেনকে বিয়ে করে স্পার্টার রাজা হন।বিয়ের পর হেলেন এক কন্যা সন্তানের জননী হন। তার নাম রাখা হয় হারমিওন।

Paris and Three Goddess
Paris Giving apple to Aphrodite

এদিকে বিশ্বের সেরা সুদর্শন পুরুষ প্যারিস ছিলেন ট্রয়ের রাজপুত্র। ‘শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর প্রাপ্য’ লেখা সোনার আপেল তিনি অ্যাথেনি ও হেরাকে না দিয়ে প্রেমের দেবী আফ্রোদিতিকে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে আফ্রোদিতি তাকে কথা দিয়েছিলেন যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর ভালোবাসা লাভে তিনি সক্ষম হবেন। প্যারিস স্পার্টায় আসেন এবং মেনেলাউসের আতিথ্য গ্রহণ করেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হেলেনের প্রেমে পড়েন তিনি। হেলেনও প্যারিসের প্রেমে পড়েন। স্বামী মেনেলাউসের অনুপস্থিতিতে তিনি প্যারিসের সঙ্গে পালিয়ে চলে আসেন ট্রয় নগরীতে। নয় বছরের কন্যা হারমিওনকে ফেলেই চলে যান তিনি। হেলেন কেন প্যারিসের প্রেমে পড়লেন সেটা এক রহস্য বটে। মেনেলাউস ছিলেন বীর। তিনি অন্য কোন নারীতে আসক্তও ছিলেন না। মোটামুটি অনুগত স্বামীই ছিলেন বলা চলে। তবে তিনি ছিলেন কাঠখোট্টা গোছের। তেমন সুদর্শনও নন। পক্ষান্তরে প্যারিস যদিও ছিলেন বিবাহিত।(প্যারিসের প্রথম স্ত্রীর নাম ইনোনি। তিনি একজন পর্বত পরী ছিলেন)। প্যারিস তেমন বীরও ছিলেন না। ট্রয় যুদ্ধে প্যারিস বীরত্বের পরিবর্তে কাপুরুষতার পরিচয় দিয়েছেন একাধিক বার। কিন্তু প্যারিস ছিলেন সুদর্শন। তিনি খুব ভালো বীণা বাজাতে জানতেন। সবচেয়ে বড় কথা প্যারিস ছিলেন কোমল স্বভাবের এবং ছিলেন প্রেমিক।অবশ্য হেলেন স্বেচ্ছায় প্যারিসের সঙ্গে গৃহত্যাগ করেছিলেন কিনা তা নিয়ে পুরাণকারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

ট্রয় যুদ্ধ
ট্রয় যুদ্ধ

ট্রয় যুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে প্যারিসের মৃত্যু হলে প্যারিসের ছোটভাই ডাইফোবাসের সঙ্গে বিয়ে হয় হেলেনের। ট্রয়ের ধ্বংস রজনীতে ডাইফোবাস নিহত হওয়ার পর মেনেলাউসের সঙ্গে হেলেন ফিরে আসেন স্পার্টায়।

গ্রিক বীর একিলিস ছিলেন হেলেনের প্রণয়প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি কোনোভাবেই হেলেনকে লাভে সমর্থ না হয়ে মা সাগর পরী থেটিসকে অনুরোধ করেন অন্তত একবারের জন্য হলেও হেলেনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করতে। থেটিস স্বপ্নে একিলিসের সঙ্গে হেলেনের মিলনের ব্যবস্থা করেন। এই কারণে হেলেনের পঞ্চস্বামী হলেন থিসিউস, মেনেলাউস, প্যারিস, ডাইফোবাস ও একিলিস।


পঞ্চস্বামী শুনে অবধারিত ভাবে দ্রৌপদীর কথা মনে পড়ে। দ্রৌপদীর পাঁচজন স্বামী থাকা সত্ত্বেও যেমন তাকে ‘অসতী’ বলতে কেউ সাহসী হয়নি তেমনি হেলেনের ‘সতীত্ব’ নিয়েও কোন প্রশ্ন ওঠেনি। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া পুরুষতন্ত্রের চরম কৌশল ‘সতী’ ও ‘অসতীর’ কনসেপ্ট তখনও মধ্যযুগের মতো চরম আকার ধারণ করেনি।

সীতার অগ্নি পরীক্ষা
সীতার অগ্নি পরীক্ষা

হেলেনের অপহরণ এবং যুদ্ধ রামায়ণের সীতা হরণের কাহিনিও মনে করিয়ে দেয় বৈকি। যদিও সীতা স্বেচ্ছায় রাবণের সঙ্গে যাননি, তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। অনিচ্ছায় গেলেও সীতাকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। সতীত্বের আদর্শ কিভাবে পাল্টেছে সেটা দুই মহাকাব্য থেকে উদাহরণ দেই। বাল্মিকীর রামায়ণে আছে সীতাকে রাবণ হরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন লংকায়। তাকে অশোকবনে রাখা হয়েছিল। রাবণ যখন সীতাকে হরণ করেন তখন তার হাত ধরে জোর করে টেনে রথে উঠান। কিন্তু সীতার মতো সতীর হাত পরপুরুষ(বা রাক্ষস) রাবণ ধরেছে এই বিষয়টি বাল্মিকীর সহ্য হলেও পরবর্তিকালের পুরাণকারদের মোটেই সহ্য হয়নি। তাই ‘ছায়াসীতা’ নামে এক উপাখ্যানের জন্ম হয়। এই উপাখ্যানে বলা হয় রাবণ নাকি সীতাকে কখনও লংকায় নেওয়া তো দুরের কথা চোখেই দেখেনি। সীতা হরণ হতে পারে এই আশংকায় অগ্নি আগেই রামকে সতর্ক করে দেন। তাই আসল সীতা অগ্নির কাছে গচ্ছিত ছিলেন। অগ্নির বরে এক ছায়াসীতার সৃষ্টি হয়্ সেই ছায়াসীতাকে নিয়েই রাম পঞ্চবটী বনে ছিলেন। সেখান থেকে ছায়াসীতাকেই রাবণ হরণ করেন। রাবণ বধের পর যখন সীতার প্রথম অগ্নিপরীক্ষা হয় তখন অগ্নি নিজে আসল সীতাকে নিয়ে আবির্ভূত হন আর ছায়া সীতাকে নিয়ে যান।

Cursed Beauty Helen
সুন্দরী হেলেনকে পাওয়ার জন্য যুদ্ধ

আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম উপাখ্যান পাই গ্রিক মিথোলজিতেও। এখানে হলো ছায়া হেলেনের কাহিনী। হোমার লিখেছেন ট্রয় যুদ্ধের পর হেলেন ফিরে আসেন স্বামী মেনেলাউসের সঙ্গে স্পার্টায়। এবং আবার সসম্মানে রানীর আসন অধিকার করেন। 

কিন্তু যে হেলেনের জন্য এত কিছু তাকে মেনেলাউস কাছে পেয়েছিল কিনা তা আজও অজানা। প্রেমের জন্য এত রক্তপাত আর ধ্বংস পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। 


#ভালবাসার গল্প

[ ইন্টারনেট অবলম্বনে ]

Peak Fiction

About the author

Noman Chowdhury
I am an avid reader, particularly drawn to books and technology. My diverse interests and drive for exploration make me a well-rounded individual with a thirst for adventure. instagramfacebookyoutubepinterest

Post a Comment