Blue Period Manga review in Bangla - Peak Fiction
নাম - Blue period
লিখেছেন - বিমুগ্ধ সরকার রক্তিম
কাহিনী -
ইয়াতোরা ইয়াগুচি। ক্লাসের ভালো এক স্টুডেন্ট। টপার। বাপ-মা যা বলেছে, তার কখনো অবাধ্য হয়নি। যেভাবে যা করতে বলেছে, করেছে। তাদের বেছে দেয়া পথ অনুযায়ীই সে আগাচ্ছে।আচ্ছা মাংগাটার ব্যাপারে বলার আগে একটু অন্য বিষয়ে কথা বলি।
ছোটবেলায় আমরা সাধারণত কেন ভালো রেজাল্ট করে থাকি, সেটা জানেন? কারণ তখন বাপ মায়ের কথাবার্তা শুনি, তাদের শাসন অনুযায়ী সন্ধ্যা সাতটায় পড়তে বসি, ভালো রেজাল্ট করার একটা তাগিদ তৈরি হয় আমাদের ভেতর।
ইয়াতোরার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। সে এতবড় হবার পরেও শাসনের কারণে তার রেজাল্টটা, ক্লাসের একটা টপ পজিশন ধরে রাখতে পেরেছে। আর কোনোদিক নিয়ে সে কখনো ভাবেনি, ভাবার চেষ্টাও করেনি। ধরেই নিয়েছে, এভাবেই জীবনটা কেটে যাবে। ভালো রেজাল্ট, ভালো জায়গায় এডমিশন, ভালো একটা অফিস জব—ব্যস। লাইফ কমপ্লিট। আর ভালো রেজাল্ট করায় বাপ মাও একটু শিথিল তার প্রতি। প্রায়ই বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি করে রাতের বেলা। কিন্তু পড়াশোনাটা কখনো হেলাফেলা করে না।
হঠাৎ করে স্কুলবর্ষের শেষের দিকে একটা ক্যারিয়ার সার্ভে পূরণ করার সময়ে তার স্কুলের আর্ট ক্লাবে ঢুকে আবিষ্কার করে—এ তো বড়ই অসাধারণ একটা জগত! আর্ট! রঙের খেলা, কল্পনার খেলা। এমন একটা জগত, তাও নিজ হাতে সৃষ্টি, যেখানে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই, যেখানে তুমিই প্রধান। আর্টক্লাসটাকে সে সবসময় বিরক্তির চোখে দেখে এসেছে, মনে মনে গালিও দিয়েছে আর্ট টিচারকে—ধ্যাত, এসব বোগাস জিনিস শিখে কী হবে! এর থেকে ঐ সময়টা একটু ফিজিক্স/ম্যাথ করলেও আগানো যায়। কিন্তু সে আবিষ্কার করে, না, এই বিষয়টাও হেলাফেলার জিনিস নয়। বরং মারাত্মক জটিল একটা জগত। সে আর্ট ক্লাসের একটা এসাইনমেন্ট করতে গিয়ে আবিষ্কার করে, আজকাল এই আর্ট তার কাছে ভালো লাগছে। হাতে কলম না, তুলি নিতেই বেশি ভালো লাগছে তার। হয়তো কাঁচা কাঁচা লাগছে শুরুতে, কিন্তু তাতে কী! আনন্দটাই মুখ্য। সে ক্লাবে যোগ দেয় গোপনে, তার আর্ট টিচার তাকে সাহায্য করে। ক্লাবের অন্যান্য সদস্যরা তাকে অন্য চোখে দেখলেও (বেশিরভাগই টপারদের বাজে চোখে দেখে) ধীরে ধীরে আবিষ্কার করে, এই ছেলের মধ্যে গুন আছে। না, ট্যালেন্ট না, পরিশ্রম করার গুন। তাকে এসাইনমেন্ট দেয়া হলো দশ পেজ, সে করবে একশ পেজ। তাকে বলা হলো স্কেচ করতে, সে সেটা বাদেও আরও অতিরিক্ত এফোর্ট দেবে। বাসায় তার মাও জানতে পারে যে, ছেলে নতুন একটা জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে, ভালোবেসে ফেলেছে এই আর্টকে। ব্যাপারটা তাকে মুগ্ধ করে। হাজার হোক, মা-ই তো। একদিন সাহস করে ইয়াতোরা তার বাপ মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, আমি এ দেশের টপ চারুকলা ডিপার্টমেটে ভর্তি হতে চাই। আর সেজন্য তোমাদের অনুমতি চাই।শুরুতে বাপ একটু অবাক হলেও ধীরে ধীরে মেনে নেন। টানাপোড়েনের সংসার হলেও নিজের ছেলের মুখ চেয়ে তাকে অনুমতি দেন, আচ্ছা করে দেখো।
ইয়াতোরা ভর্তি হয় একটা আর্ট কোচিং এ। আপনারা বোঝার সুবিধার্থে ধরে নেন, সে বুয়েট কোচিং এর জন্য উদ্ভাসে ভর্তি হয়েছে। কিংবা বিসিএস কোচিং। যেখানে কোচিং এ অনেকে ভর্তি হলেও চান্স পায় হাতে গোণা কয়েকজন। অনেক মানুষ আছে যারা এই চারুকলাতে ইতোমধ্যে পাঁচ ছয়বার এক্সামও দিয়ে ফেলেছে। তাও পাশ করতে পারছে না। ইয়াতোরা দেখতে পারে, এই জগতটা ট্যালেন্ট দিয়ে চলে। হতাশ হলেও সে হাল ছেড়ে দেয় না, পরিশ্রম দিতেই থাকে। সাপ্তাহিক কুইজ(!) এসাইনমেন্টে সবটুকু ঢেলে দিতে থাকে।হাতে সময় মাত্র তিনমাস! (অবাক ব্যাপার, এডমিশনের জন্য আমরাও তিনমাস পেয়েছিলাম।) এর মধ্যেই তার একমাত্র সুযোগ। সে উঠেপড়ে লাগতে শুরু করে। সে কি চারুকলায় ভর্তি হতে পারবে?
এই মাঙ্গাটা সম্পর্কে অনেক কথা বলা যায়। এডমিশন টাইমের ছেলেপেলেদের জীবনে অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়, মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন আসে। অনেকে আমার মতো হতাশাগ্রস্থ হয়ে সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলে, অনেকে নতুন উদ্যমে নিজেকে গড়ে তোলে। তাদের আমি এই মাংগা পড়তে উৎসাহ দিতাম। পরিশ্রম করলে একটা লিমিট পর্যন্ত পৌঁছানো যায়, কিন্তু তার মানে এই না যে, টপ পজিশনটা তোমার হয়ে যাবে। তোমাকে মেনে নিতে হবে, এই জগতে ট্যালেন্ট এর অস্তিত্ব রয়েছে। আর ভাগ্য—সেইটা আসলেই আছে। ভাগ্য থাকলে একদম তলানিতে থাকা তুমিও সর্বোচ্চ আসনে বসতে পারবে।
হয়তো যারা মাঙ্গাটা পড়েন, তারা ভেবেছিলেন আমি এই মাংগা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নানান আর্ট, তাদের পেছনের ইতিহাস, আর্ট করার বিভিন্ন ক্ষেত্র ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত লিখব। কিন্তু আমি যে ব্লু পিরিয়ড মাংগার ফিলোসফিকাল আর জীবন দর্শন গুলোকেই বেশি পছন্দ করি।
রেডিটের একটা পোস্ট দেখেছিলাম, সেখানে একজন লিখেছে—“আমার মা স্কুলটিচার ছিলেন, বয়স ৬৫+। তিনি হঠাৎ করে আমার কাছে একটা মাংগা পড়তে চাইলেন। ব্লু পিরিয়ড মাংগা পড়তে দিলাম। এখন তার জন্য আমাকে প্রত্যেকটা ভলিউম অর্ডার করে আনতে হয়েছে। তিনি কখনো মাংগা পড়েননি, আর্ট সম্পর্কেও তার জানাশোনা নেই। তাও তিনি ভালোবেসে ফেলেছেন এই মাংগাটাকে।”
এর মানে এই মাংগা পড়তে কোনো আর্ট বিষয়ক জ্ঞান লাগবে না আপনার। একদম নতুন হলেও এটা পড়া শুরু করতে পারবে। আমি যা যা লিখলাম, সেটা বাদেও অসাধারণ একটা জগত খুঁজে পাবেন মাঙ্গাটা পড়তে গিয়ে।
Blue period কিন্তু বেশ বিখ্যাত একটা টার্ম। পাবলো পিকাসোর বন্ধু কারলোস মারা যান ১৯০১ সালে। সেই ১৯০১ থেকে ১৯০৪ পর্যন্ত নিজের দুঃখ, বেদনা, বন্ধু হারানোর কষ্ট, দারিদ্র্য—ইত্যাদিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তার ছবিগুলোয়—এ সময়ে আঁকা প্রত্যেকটা ছবিতে ছিল বিষন্ন নীল রঙের আধিক্য। আর সেজন্য এই সময়টাকে ‘ব্লু পিরিয়ড’ বলা হয়ে থাকে।
কেন পছন্দের?
এইখানে প্রত্যেকটা চরিত্রই নজরকাড়া। তবে আমার ভালো লেগেছে রিয়েলিস্টিক কিছু চরিত্রকে। বিশেষ করে ফুজি কিরিয়ো নামের সেই রহস্যময় বোহেমিয়ান চরিত্রকে। মেয়েটা…একটা রহস্য। সে জীবনকে সম্পূর্ণ অন্য চোখে দেখছে। লিভিং ফর দ্য পারপোস অফ ইঞ্জয়িং লাইফ অর্থাৎ জীবনকে সে উপভোগ করছে। আপনাদের জীবনে কেউ এরকম এসেছে কিনা জানি না, কিন্তু এরকম চরিত্ররা জীবনে এসে আপনার সকল স্ট্যান্ডার্ড, আপনার ভালোমানুষির সংজ্ঞা, জীবনের সংজ্ঞা সবকিছু ভেঙ্গেচুরে ফেলবে। আপনার হাত ধরবে অনায়সে, টেনে নিয়ে যাবে অদ্ভুত একটা জগতে, আপনাকে আপন বলে কাছে টেনে নিবে, কিন্তু যখনই ওর কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করবেন, দেখবেন –সে আবার হারিয়ে গিয়েছে। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে আপনার ওপর। এখন তার আগ্রহ সম্পূর্ণ নতুন বিষয়ে। যেন আপনি তার খেলনা ছিলেন। পুরোনো হয়ে যাওয়ায় আপনাকে ফেলে দিয়েছে সে, খুঁজে নিয়েছে নতুন কিছুকে, যা তার মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে।
দারুন।
দারুন।
দারুন।
রেকমেন্ড করলাম!
আমার প্রিয় মাংগা বিধায় এটা নিয়ে কিছুক্ষণ হড়বড় করে লিখে গেলাম। সেজন্য দুঃখিত। কিন্তু আসলেই অসাধারণ একটা মাঙ্গা এই ব্লু পিরিয়ড।
Comments
Post a Comment